বগুড়ার ঐতিহ্য বেহুলা-লক্ষীন্দরের বাসরঘর

প্রকাশঃ জানুয়ারি ২১, ২০১৭ সময়ঃ ১২:০৫ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১:১৯ পূর্বাহ্ণ

Gokul 01

বগুড়ার মহাস্থাগড় থেকে দেড় কি.মি. দক্ষিণে অবস্থিত গোকুল গ্রাম। জেলার সদর থানাধীন এই গ্রামটিতে রয়েছে খননকৃত একটি প্রত্মতত্ত্ব স্থল গোকুল মেধ। এটি দেশের বহু পরিচিত লোকগাঁথার নায়ক-নায়িকা বেহুলা লক্ষীন্দরের বাসর ঘর হিসেবে জনসাধারণের কাছে পরিচিত। তাই এই স্থানটিকে লক্ষীন্দরের মেধও বলা হয়।

১৯৩৪-৩৬ সালে এ,জি, মজুমদার কর্তৃক উৎখননের ফলে এখানে একটি বিশাল মন্দির বা স্তুপের ভিত্তি উন্মোচিত হয়েছে। এই ভিত্তিটি স্তরে স্তরে উঁচু করে কুঠুরির ভিত্তিতে নির্মিত হয়েছে। এখানে ১৭২টি কুঠুরি বিভিন্ন তলে মাটি দিয়ে ভরাট করে নিচ থেকে উপর দিকে বর্ধিত অবস্থায় এমনভাবে সাজানো হয়েছিলো যাতে এগুলো কোনো সু-উচ্চ মন্দির বা স্তুপের ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

গুপ্তযুগের কতগুলো পোড়া মাটির ফলক পাওয়া গেছে এখান থেকে। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী প্রত্মতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে এই স্থাপত্যটিকে সংরক্ষণের জন্য বর্তমানে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তর।

বগুড়া জেলার প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক মো: বদরুল আলম জানান, ১৯৩৪ সালে খনন কাজ করার পর এটিকে অনেকটা ভাঙা অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিলো। এরপর আমরা অনেক সংস্কার করেছি। এখন এটি মানুষের কাছে উপস্থাপনের উপযোগী হয়েছে। বাগান করা হয়েছে। এছাড়াও এটিতে সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য নানা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

মনসা gokul 02মঙ্গল কাব্যের অন্যতম চরিত্র বেহুলা। সতি সাধ্বী, পরমা সুন্দরী এবং সর্বগুণে গুণান্বিতা বেহুলা সর্পদেবী মনসার আক্রোশে বিয়ের রাতে লৌহ বাসরে থাকার পরও সর্প দংশনে স্বামী লক্ষীন্দরের চিরদিনের জন্য হারালে তার পুন: জীবন কামনায় কলা গাছের ভেলায় স্বামীর মৃতদেহ নিয়ে গাংওরের জলে ভেসে দেবপুরীর উদ্দেশ্যে এক অজানা দূর্গম পথে যাত্রা করে।

নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে দেবপুরীতে পৌঁছে, নৃত্য প্রদর্শন করে দেবতাদের তুষ্ট করতে সক্ষম হন। সেই সাথে দেবী মনসা ও চাঁদ সওদাগরের বিরোধ মিটিয়ে মনসাকে দেবীর মর্যাদা এনে দেন এবং স্বামী লক্ষীন্দরের প্রাণ ফিরিয়ে আনেন।

বাঙালি নারী সমাজের অন্যতম আদর্শ চরিত্র বেহুলা। এর মধ্য দিয়ে বাঙালি রমণীদের শাশ্বত স্বামীভক্তির এক অসাধারণ চিত্র উঠে আসে। লোকশ্রুতি আছে, মর্ত্যলোকে বেহুলার জীবন-যাপন এবং এর কাহিনির সাথে মিল রয়েছে গোকুল মেধের।

তাইতো প্রতিদিনই দেশের দূর-দূরান্ত থেকে শিশু-কিশোরসহ অসংখ্য দর্শণার্থীদের আগমন ঘটছে গোকুল মেধ, অর্থাৎ বেহুলার বাসর ঘর দর্শনে। এভাবেই বাঙালির মনে বেঁচে থাকবে বেহুলা-লক্ষীন্দর।

প্রতিক্ষণ/এডি/এস.আর.এস

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

April 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
20G